‘রাজপুত্র’ নেইমার জুনিয়র ফিরলেন ঘরে। সুপারস্টারকে ফিরে পেয়ে উচ্ছ্বাসের বন্যায় ভাসল পুরো সান্তোস! ‘দ্য প্রিন্স ইজ ব্যাক’ স্লোগানে মুখরিত ভিলা বেলমিরো আবেগ আর উৎসবের মিশেলে বরণ করে নিল নেইমারকে। ‘রাজপুত্র’ হয়ে শৈশবের ক্লাবে প্রত্যাবর্তনে নেইমার যেন বনে গেলেন রাজা। ব্রাজিলিয়ান ক্লাবটির এখন সবচেয়ে তারকা তিনি। দেশটির সবচেয়ে দামী ফুটবলারও নেইমার। প্রাণ ভোমরা হয়ে সান্তোসে গড়লেন নতুন রাজত্ব। যে রাজ্যের রাজা কেবল নেইমারই!
তার প্রমাণ তো সান্তোস দিয়েছে স্টেডিয়ামের বাইরে- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তির সহায়তায় আঁকা গ্রাফিতি এঁকে। যেখানে নেইমারের মাথায় মুকুট জুড়ে দিয়েছে ক্লাবটি। সান্তোসে পেলে-ই আসল রাজা। এ কিংবদন্তির সামনে নেইমার কেবল রাজপুত্র। কিন্তু পেলের পুরোনো রাজ্যে নেইমার এখন নতুন ‘রাজা’! কেননা ক্লাব সান্তোসের সঙ্গে ছয় মাসের জন্য ফের চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন এ মেগাস্টার।
সান্তোস ‘দ্য প্রিন্স ইজ ব্যাক’ শিরোনামে ভিডিও ছেড়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে। তার আগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় পেলের কণ্ঠস্বরে নেইমারকে শৈশবের ঠিকানায় ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েও ভিডিও ছেড়েছিল তারা। অন্য ভিডিওতে প্রয়াত কিংবদন্তিকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে নেইমার বলেন, ‘কিং পেলে, আপনার ইচ্ছা আমার জন্য নির্দেশ। সিংহাসন ও মুকুট আপনারই। কারণ, আপনি চিরঞ্জীব। কিন্তু পবিত্র ১০ নম্বর জার্সিটা পরতে পারাটা হবে সম্মানের, যেটা সান্তোস ও ফুটবল বিশ্বের জন্য বিশেষ কিছু। আপনার রেখে যাওয়া উত্তরাধিকারকে শ্রদ্ধা জানাতে, আমি সবকিছু করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’
ফুটবল মহাতারকা নেইমার ফিরেছেন। এমন প্রত্যাবর্তন রাঙিয়ে তুলতে করণীয় সব কিছুই করেছে সান্তোস কর্তৃপক্ষ। সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলালের অধ্যায় শেষ করে শেকড়ের টানে প্রিয় জন্মভূমিতে ফিরেছেন নেইমার। তার ফেরাটা স্মরণীয় করে রাখতে স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে কনসার্টের আয়োজন করে ব্রাজিলিয়ান লিগের জায়ান্ট ক্লাবটি। তুমুল বৃষ্টি উপেক্ষা করেও ভিলা বেলমিরোর গ্যালারিতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না যেন। গ্যালারিতেই নেচে-গেয়ে, হর্ষ-ধ্বনি আর স্লোগানে উৎসবে মেতেছিল প্রায় ২০ হাজার ফুটবল অনুরাগী। স্টেডিয়ামের বাইরে ছিল অগণিত ভক্ত-সমর্থকদের উল্লাস আর হৈ-হুল্লোড়। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাতে নেইমারকে ফিরে পাওয়ার এ আনন্দ-উৎসব চলে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে।
সান্তোসের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগে দেশটির স্থানীয় সময় সকালে প্রাইভেট জেটে করে সাও পাওলোতে পা রাখেন নেইমার। ঘণ্টা কয়েক বিশ্রামের পর হেলিকপ্টারে করে ক্লাব সান্তোসে প্রাণের ঠিকানায় পৌঁছে যান ৩২ বছরের এ তারকা স্ট্রাইকার। অনুষ্ঠানের মধ্যমণি ছিলেন নেইমারই। তাকে বরণ করে নিতে মাঠের মধ্যে সজ্জিত ছিল বর্ণিল মঞ্চ। অনুসারীদের ভালোবাসার জবাব দিয়েছেন নেইমার হাত নেড়ে। নিজেদের ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে পেয়ে দর্শকরাও উষ্ণ অভ্যর্থনায় সিক্ত করেছেন প্রিয় তারকাকে। কালো ক্যাপ-প্যান্ট আর সাদা জার্সি পরিহিত নেইমার খুশির জোয়ারে ভেসে কী করবেন, সেটাই যেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। আবেগআপ্লুত হয়ে মাঠের মাটিতে রেখেছেন মাথা, হাত আর মাথা নুইয়ে নিজের ট্রেডমার্ক গোল উদযাপনও সেরে নিয়েছেন। খুশির অশ্রুতে ভিজিয়েছেন চোখ। সান্তোসের মাটিতে প্রিয় ফুটবল মঞ্চে খেয়েছেন আদুরে চুমো। নেইমার নামের সুপারস্টারের বেড়ে উঠা তো ভিলা বেলমিরোর ওই মাঠেই।
উৎসবের আমেজে থাকা স্থানীয় ফুটবলপ্রেমীরা নেইমারের কাছ থেকে তার পায়ের ড্রিবলিং জাদু উপভোগ করতে চেয়েছিলেন। জবাবে নেইমার জানিয়েছেন মাঠের লড়াইয়ে দর্শক চাহিদা পূরণে সব রকম চেষ্টাই করে যাবেন, ‘আমি খুবই খুশি। এখানে দারুণ সময় কেটেছে। তেমন সময় সামনে আরও আসবে। (ড্রিবল করতে) সাহসের কমতি থাকবে না।’
২০২৬ বিশ্বকাপ নেইমারের শেষ বৈশ্বিক আসর! তার আগে ব্রাজিলের জার্সিতে খেলতে হবে। নিয়মিত ম্যাচ খেলার দরকার হলেও আল হিলালে সুযোগটা পাচ্ছিলেন না। সান্তোসে এবার সেই সুযোগ পেতে চান নেইমার। বিশ্বকাপ নিয়ে এ স্টার ফরোয়ার্ড বলেন, ‘আমি জাতীয় দলে ফিরতে চাই। অর্জনের জন্য এখনো একটি (বিশ্বকাপ) মিশন বাকি আছে, যেটা আমার শেষ সুযোগ বলে মনে করি। যাই হোক না কেন, আমি এটার পেছনে ছুটব।’
কেন ফিরলেন সান্তোস? কারণ ব্যাখ্যা করেন নেইমার বলেন, ‘কিছু সিদ্ধান্ত থাকে, যেটা ফুটবলীয় চুক্তির বাইরে। আল হিলালে ভালোই ছিলাম। পরিবার ভালো ছিল। কিন্তু কিছু ঘটনায় সিদ্ধান্তটি নিতেই হলো। অনুশীলনে নিজেকে অসুখী লাগছিল। ফেরার সুযোগটা পেয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার ভাবিনি।’ প্রত্যাবর্তনে অনুভূতি কেমন? নেইমারের ভাষ্য, ‘এখানে পা রাখার পর থেকেই মনে হচ্ছে, ১৭ বছর বয়সে ফিরে গেছি। খুব ভালো লাগছে এবং খেলার জন্য মুখিয়ে আছি।’
তবে নেইমারকে আসন্ন বিশ্বকাপ পর্যন্ত ধরে রাখার চেষ্টা করবে সান্তোস। ক্লাবটির সহসভাপতি ফার্নান্দো বোনাভিদেস ক্যানাল সমর্থকদের দিয়েছেন সেই প্রতিশ্রুতি, ‘এই চুক্তিপত্র প্রাথমিকভাবে ছয় মাসের। কিন্তু তাকে ধরে রাখতে আমরা সব রকম চেষ্টাই করব। আমরা যেটা চাচ্ছি, সে যেন আগামী বিশ্বকাপ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকে।’
